কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে কচ্ছপ ও লাল কাঁকড়া প্রজনন এলাকা ‘লাল কাঁকড়া বিচ’ সংরক্ষণের নামে উল্টো পরিবেশ ধ্বংসেরই আয়োজন চলছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে রাতে সৈকতে আলোর ব্যবস্থা করতে বসানো হয়েছে ৫০টিরও বেশি সৌরবিদ্যুতের প্যানেল। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) এমন কার্যক্রমের জন্য নেওয়া হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনও। সৈকত দেখভালের দায়িত্বে থাকা সি-বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটিও দেয়নি অনুমোদন।
সৈকতের প্রায় ১০ একর বালিয়াড়ি ঘিরে কাজটি করা হচ্ছে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসাইন সজিবের পরিচালনায়। তিনি আবার পদাধিকার বলে উপজেলা ইসিএ রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির সভাপতিও। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রায় কোটি টাকা বিনিয়োগের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োগ দেওয়া হয়নি কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও।
সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের উখিয়ার পাটুয়ারটেকের পর বাইল্ল্যাখালী এলাকায় মেরিন ড্রাইভ সড়ক লাগোয়া অন্তত ১০ একর বালিয়াড়ি কাঠ দিয়ে ঘিরছেন শ্রমিকরা। বালিয়াড়িতে রোপণ করা হয়েছে কাঠগোলাপ, পাম, নারিকেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা। রাতে আলোর ব্যবস্থা করতে বসানো হয়েছে ৫০টির বেশি সৌরবিদ্যুতের প্যানেল। শ্রমিকরা জানান, এখন পর্যন্ত যে কাজ হয়েছে, তাতে প্রায় কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে।
ইউএনও ইমরান হোসাইন সজিব বলেন, লাল কাঁকড়া সংরক্ষণ এবং পর্যটকদের বিনোদনের জন্য কাজটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছও রোপণ করা হয়েছে। তবে কাজটি এখনও শেষ হয়নি। তিনি দাবি করেন, রাতে বিদ্যুতের আলো এবং পর্যটকের অবাধ যাতায়াতে লাল কাঁকড়া কিংবা পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ ওই এলাকায় কোনো বিচবাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না।
পরিবেশ অধিদপ্তর অবশ্য জানিয়েছে, সৈকতের কোনো এলাকায় রাতে বিদ্যুতের আলো থাকলে সেখানে লাল কাঁকড়াসহ কোনো জীববৈচিত্র্য থাকবে না। এমনকি ওই এলাকায় কচ্ছপ পর্যন্ত ডিম দিতে আসবে না।
ফলো করুন-
ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন সমকাল ইউটিউব
কক্সবাজার সি-বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ইসিএ এলাকায় এ ধরনের কাজের জন্য কোনো ব্যক্তি বা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি অনুমোদন দেয়নি। এর পরও যদি বেআইনিভাবে কেউ কাজ করে, তবে তা উচ্ছেদ করা হবে।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, অধিদপ্তরকে না জানিয়ে সৈকতে পরিবেশ সংরক্ষণের কথা বলে উপজেলা প্রশাসন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবেশ ধ্বংসের কাজটি করছে। হয়তো এর পেছনে কোনো প্রভাবশালী বিনিয়োগ করছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, সৈকত কিংবা অন্য যেখানেই হোক, ইসিএ এলাকায় কোনো কিছু করার আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হবে। লাল কাঁকড়া সংরক্ষণ এবং পর্যটকদের বিনোদনে কোনো প্রকল্পের অনুমতি অধিদপ্তর দেয়নি। প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ বলেন, যতটুকু শুনেছি, উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে সৈকতের ওই এলাকায় লাল কাঁকড়া সংরক্ষণের জন্য কাজটি করা হচ্ছে। তবে লাল কাঁকড়া সংরক্ষণ করতে হলে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসানোর কথা না।
উখিয়া উপজেলার তিনজন ইউপি চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে জানান, ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত তো দূরের কথা, কোনো আলোচনাই হয়নি।
এদিকে, বক্তব্য নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার বালিয়াড়িতে বসানো কয়েকটি সোলার প্যানেল তুলে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতকে ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ইসিএ এলাকায় প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংসকারী সব প্রকার কার্যকলাপ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া ঝিনুক, কোরাল, কচ্ছপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী ধরা বা সংগ্রহ করাসহ ৯টি কাজ নিষিদ্ধ করা হয়। সুত্র: দৈনিক সমকাল
পাঠকের মতামত